কান ব্যথা হলে শিশুকে কীভাবে সামলাবেন

কান ব্যথা হলে শিশুকে কীভাবে সামলাবেন

শিশুর কান ব্যথা! এই অভিজ্ঞতা প্রায় সব বাবা-মায়ের জীবনেই আসে। ছোট শিশুর কান ব্যথা হলে তারা বোঝাতে পারে না, শুধু কান্নাকাটি করে। আর সেই কান্না দেখে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বিশেষ করে রাতে এই সমস্যা হলে যেন আকাশ ভেঙে পরে! কান ব্যথা ছোটখাটো সমস্যা হলেও, সময়মতো এর চিকিৎসা না করালে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই শিশুর কান ব্যথার কারণ, লক্ষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকা প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্য জরুরি। আপনার আদরের সোনামণির কান ব্যথা হলে কীভাবে তাকে সামলাবেন, কী করবেন আর কী করবেন না, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কান ব্যথার সাধারণ কারণগুলো কী কী?

শিশুদের কান ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে এর মধ্যে কয়েকটি কারণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:

  • মধ্যকর্ণের সংক্রমণ (Middle Ear Infection): এটি শিশুদের কান ব্যথার প্রধান কারণ। ঠান্ডা লাগা বা অন্য কোনো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মধ্যকর্ণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে এই সমস্যা হয়। শিশুদের ইউস্টেশিয়ান টিউব (Eustachian tube) ছোট এবং অনুভূমিক হওয়ায় সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পরে।

  • সর্দি ও কাশি: সর্দি ও কাশির কারণে নাকের পেছনের অংশ থেকে কান পর্যন্ত সংযোগকারী টিউব বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে কানে ব্যথা হতে পারে।

  • বহিঃকর্ণের সংক্রমণ (Outer Ear Infection/Swimmer’s Ear): এটি সাধারণত সাঁতার কাটার পরে বা কানে পানি ঢুকলে হয়। কানে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।

  • দাঁত ওঠার সময়: দাঁত ওঠার সময় শিশুদের মাড়িতে ব্যথা হয়, যা কানের দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে।

  • আঘাত: কানে কোনো আঘাত লাগলে, যেমন – খেলনা বা অন্য কিছু দিয়ে খোঁচা লাগলে ব্যথা হতে পারে।

  • অ্যালার্জি: কোনো অ্যালার্জির কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে।

    শিশুর কান ব্যথার লক্ষণগুলো কীভাবে চিনবেন?

    ছোট শিশুরা কথা বলতে না পারায় কান ব্যথার লক্ষণগুলো চেনা কঠিন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন:

  • অবিরাম কান্না করা, বিশেষ করে রাতে।

  • কান টানা বা কান ধরে রাখা।

  • মাথা নাড়ানো বা ঝাঁকানো।

  • খাবার খেতে না চাওয়া বা বুকের দুধ টানতে অসুবিধা হওয়া।

  • ঘুমোতে না পারা বা ঘুমাতে অসুবিধা হওয়া।

  • জ্বর হওয়া।

  • কান থেকে তরল নির্গত হওয়া (পুঁজ বা রক্ত)।

  • বিরক্ত বা খিটখিটে মেজাজ।

    কান ব্যথা হলে শিশুকে কীভাবে শান্ত করবেন? কিছু ঘরোয়া উপায়

    কান ব্যথা হলে শিশুকে শান্ত করতে এবং ব্যথা কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন:

  • ব্যথানাশক ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সিরাপ দিন। ওষুধের মাত্রা অবশ্যই শিশুর ওজন এবং বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

  • গরম সেঁক: একটি পরিষ্কার কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। তারপর কাপড়টি নিংড়ে শিশুর কানের চারপাশে আলতো করে সেঁক দিন। গরম সেঁক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

  • শিশুকে সোজা করে ধরে রাখুন: শিশুকে কোলে নিয়ে বা উঁচু বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখুন। এতে কানের ভেতরের তরল বেরিয়ে যেতে সুবিধা হবে এবং ব্যথা কম লাগবে।

  • নাক পরিষ্কার রাখা: নাকের ভেতর জমে থাকা শ্লেষ্মা পরিষ্কার রাখতে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করুন। এতে ইউস্টেশিয়ান টিউবের ওপর চাপ কমবে।

  • আর্দ্রতা বজায় রাখা: ঘর শুষ্ক থাকলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন অথবা ঘরের মধ্যে ভেজা কাপড় টাঙিয়ে রাখুন।

  • বুকের দুধ পান করানো: বুকের দুধ পান করালে শিশুর আরাম লাগবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

  • আদর ও স্নেহ: শিশুকে আদর করুন, গান শোনান বা গল্প বলুন। এতে সে শান্ত থাকবে এবং ব্যথার অনুভূতি কম হবে।

    কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?

    কিছু ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসায় কান ব্যথা ভালো না হলে বা অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে:

  • যদি শিশুর জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হয়।

  • কান থেকে পুঁজ বা রক্ত বের হলে।

  • ব্যথা তীব্র হলে এবং কোনো কিছুতেই না কমলে।

  • শিশুর শ্রবণক্ষমতা কমে গেলে।

  • যদি কান ব্যথার সাথে মাথা ঘোরা বা বমি হয়।

  • যদি ২-৩ দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হয়।

ডাক্তার সাধারণত কান পরীক্ষা করে সংক্রমণের কারণ নির্ণয় করেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধ দেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজে ওষুধ খাওয়ান এবং কোর্স সম্পন্ন করুন।

কান ব্যথা প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন?

কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করে শিশুর কান ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব:

  • ধূমপান পরিহার করুন: শিশুর আশেপাশে ধূমপান করবেন না। পরোক্ষ ধূমপান (Secondhand smoke) শিশুদের কানের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • নিয়মিত হাত ধোয়া: শিশুকে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। বিশেষ করে খাবার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে।

  • শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান: সম্ভব হলে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান। বুকের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

  • টিকাকরণ: সময়মতো শিশুর সব টিকা দিন। নিউমোকোক্কাল (Pneumococcal) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza) টিকা কানের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

  • ফিডিং পজিশন: শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়ানোর সময় খেয়াল রাখুন যেন সে শুয়ে না থাকে। ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ধরে দুধ খাওয়ান।

  • সাঁতারের পর কান পরিষ্কার: শিশুরা সাঁতার কাটার পরে তাদের কান পরিষ্কার করে দিন। কানের বাইরের অংশ নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিন।

  • ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচান: শীতকালে শিশুকে গরম কাপড় পরিয়ে রাখুন এবং ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন।

    শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জরুরি জিনিসপত্র

    শিশুর কান ব্যথার সময় বাচ্চার আরামের জন্য কিছু জিনিস হাতের কাছে রাখা ভালো। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনি আপনার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই পাবেন:

  • নরম তোয়ালে: কান মুছে দেওয়ার জন্য।

  • বেবি ওয়াইপস: পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার জন্য।

  • প্যারাসিটামল ড্রপ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহারের জন্য।

  • স্যালাইন ড্রপ: নাক পরিষ্কার রাখার জন্য।

  • শিশুর জন্য আরামদায়ক পোশাক: যা পরে সে স্বস্তি বোধ করে।

  • কিছু মজার খেলনা ও বই: কান্নার সময় তার মন অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য।

শিশুর সুস্থতাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। কান ব্যথা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিন। আপনার সামান্য সচেতনতাই আপনার শিশুকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারে। সুস্থ থাকুক আপনার সোনামণি! আমাদের ওয়েবসাইটে আরও অনেক স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস ও বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। একবার ঘুরে আসতে পারেন।

Subscribe to News
Comments(0)
No Comments Yet. Write First Comment.
Submit Comment
More Comments
Submit

আরো পড়তে পারেন

Subscribe to News