শিশুর দাঁত ওঠার সময় জ্বর হলে করণীয়
শিশুর দাঁত ওঠার সময় জ্বর হলে করণীয়

শিশুর দাঁত ওঠার সময় জ্বর হলে করণীয়

বাবা-মা হওয়ার অনুভূতি নিঃসন্দেহে আনন্দের, তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক দায়িত্ব আর দুশ্চিন্তা। বিশেষ করে যখন আপনার ছোট্ট সোনার শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। শিশুদের দাঁত ওঠা তেমনই একটি পর্যায়, যা অনেক বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাঁত ওঠার সময় শিশুদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, মাড়ি ফোলানো, এমনকি হালকা জ্বরও আসতে পারে। শিশুর দাঁত ওঠার সময় জ্বর হলে কী করবেন, তা নিয়ে আজকের আলোচনা।

দাঁত ওঠার সময় জ্বর হওয়া স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক, কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, এবং এই সময়টাতে আপনার আদরের সন্তানের কষ্ট কমাতে কী কী করতে পারেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

দাঁত ওঠা: কখন শুরু এবং লক্ষণগুলো কী কী?

সাধারণত শিশুদের ৬ মাস বয়স থেকে দাঁত ওঠা শুরু হয়। তবে, এর আগে বা পরেও দাঁত উঠতে দেখা যায়। প্রতিটি শিশুর শারীরিক গঠন আলাদা হওয়ার কারণে দাঁত ওঠার সময়টাও ভিন্ন হতে পারে। দাঁত ওঠার কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • মাড়ি ফোলানো ও লাল হয়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত লালা পড়া
  • কিছু চিবানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা কান্নাকাটি করা
  • ঘুমের সমস্যা হওয়া
  • খাবার গ্রহণে অনীহা

এই লক্ষণগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন আপনার শিশুটির দাঁত উঠছে। তবে, মনে রাখবেন, এই সময়ে শিশুর শরীরে অন্য কোনো সমস্যাও দেখা দিতে পারে, তাই ভালোভাবে খেয়াল রাখা জরুরি।

দাঁত ওঠার সময় জ্বর: কতটা স্বাভাবিক?

দাঁত ওঠার সময় হালকা জ্বর (৯৯-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে প্রদাহের কারণে শরীর সামান্য গরম হতে পারে। তবে, জ্বর যদি ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, তাহলে তা দাঁত ওঠার কারণে নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, উচ্চ জ্বর অন্য কোনো সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।

দাঁত ওঠার সময় জ্বর হলে করণীয়: কিছু জরুরি টিপস

শিশুর দাঁত ওঠার সময় জ্বর হলে আপনি কয়েকটি ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে তার কষ্ট কমাতে পারেন। নিচে কিছু কার্যকরী টিপস দেওয়া হলো:

  • শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার দিন: জ্বরের সময় শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়, তাই শিশুকে বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা দুধ বার বার দিন। ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য জল, ফলের রস, বা ডাবের জলও দিতে পারেন।

  • শরীর মুছে দিন: হালকা গরম জল দিয়ে নরম কাপড় ভিজিয়ে শিশুর শরীর মুছে দিন। এতে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমবে এবং শিশু আরাম বোধ করবে।

  • ঠাণ্ডা কিছু চিবোতে দিন: ফ্রিজে রাখা পরিষ্কার কাপড় বা টিথিং রিং (Teething ring) শিশুকে চিবোতে দিন। ঠাণ্ডা জিনিস মাড়ির ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা কমায়।

  • ব্যথানাশক ঔষধ: যদি জ্বর বেশি থাকে এবং শিশু খুব বেশি কান্নাকাটি করে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সিরাপ দিতে পারেন। অবশ্যই ঔষধের মাত্রা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন।

  • আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন: শিশুকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। তাকে কোলে নিয়ে আদর করুন, গান শোনান বা গল্প বলুন। আরামদায়ক এবং পরিচিত পরিবেশে থাকলে শিশু অনেকটা স্বস্তি পাবে।

  • মাড়িতে হালকা ম্যাসাজ করুন: পরিষ্কার আঙুল দিয়ে বা নরম কাপড়ের সাহায্যে শিশুর মাড়িতে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ব্যথা কমবে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?

যদিও দাঁত ওঠার সময় হালকা জ্বর হওয়া স্বাভাবিক, তবুও কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে কয়েকটি পরিস্থিতি উল্লেখ করা হলো:

  • জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে।
  • জ্বরের সাথে কাশি, শ্বাসকষ্ট বা বমি হলে।
  • শিশুর শরীরে র‍্যাশ (Rash) দেখা দিলে।
  • শিশু খাবার খেতে বা দুধ টানতে না পারলে।
  • অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে বা নিস্তেজ হয়ে গেলে।
  • ডায়রিয়া বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা গেলে।

এই লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, আপনার শিশুর সুস্থতাই আপনার প্রধান লক্ষ্য।

দাঁত ওঠার সময় শিশুর যত্নে আরও কিছু টিপস

দাঁত ওঠার সময় শিশুদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এখানে আরও কিছু টিপস দেওয়া হলো যা আপনার শিশুর কষ্ট কমাতে সাহায্য করবে:

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: দাঁত ওঠার সময় শিশুরা সবকিছু মুখে দেয়, তাই তাদের হাতের কাছে থাকা জিনিসপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে খেলনা এবং অন্যান্য জিনিস পরিষ্কার করুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার দিন: ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য নরম এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার তৈরি করুন। ফল ও সবজি সেদ্ধ করে ম্যাশ করে দিতে পারেন।
  • ধৈর্য ধরুন: দাঁত ওঠার সময় শিশুরা খিটখিটে মেজাজের হতে পারে। এই সময়টাতে তাদের প্রতি একটু বেশি ধৈর্যশীল হন এবং তাদের ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখুন।

দাঁত ওঠার সময়টি একটি চ্যালেঞ্জিং হলেও এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সঠিক যত্ন ও মনোযোগের মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুর এই সময়টি সহজ করতে পারেন।

শিশুদের জন্য দরকারি সবকিছু এখন আপনার হাতের মুঠোয়! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনি খুঁজে পাবেন আপনার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য – খেলনা, বই, পোশাক, এবং আরও অনেক কিছু। এখনই ভিজিট করুন এবং আপনার সন্তানের জন্য সেরা জিনিসটি বেছে নিন। সুস্থ ও সুন্দরভাবে আপনার সন্তান বেড়ে উঠুক, এটাই আমাদের কামনা।

Related Posts
Subscribe to News
Comments(0)
No Comments Yet. Write First Comment.
Submit Comment
More Comments
Submit
Related Posts
Subscribe to News